বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
ভূয়া সনদপত্র প্রদান, ট্রেড লাইসেন্স, উত্তরাধিকার সনদ ও জন্ম সনদ দেয়ার জন্য টাকা দাবি, ভিডব্লিউবির কার্ড দেয়ার কথা বলে টাকা আদায়, ২৪ মাসের চাল না দিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়া, টাকার বিনিময়ে সহায়তার কার্ড ইস্যু করা, ৯ মাসের চাল না দিয়ে তার বিক্রির টাকা আত্মসাৎ, কর্মসূচি ও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের টাকা নিতে ২৬ পার্সেন্ট দাবি, ট্যাক্স পরিশোধের পরও জোর করে পুনরায় ট্যাক্স কালেকশন ও ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ২ লাখ টাকা দাবিসহ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম তুলে ধরে সুনামগঞ্জ আমল গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর মামলা (সিআর মোং নং-২১৪/২০২৩) দায়ের করেছেন একই পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার ও ২নং প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ ছাইদ আহমদ। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপারকে তদন্ত পূর্বক আগামি ২১ ডিসেম্বরের ভেতরে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে দায়ের করা মামলার সূত্রে জানা যায়, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যান অন্যান্য সদস্যদের পাশ কাটিয়ে তার মনগড়া মতো পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কোন ধরণের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অর্থ আত্মসাতে লিপ্ত রয়েছেন। তার এসব মনগড়া কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় পরিষদের অনেকেই হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এমনকি চেয়ারম্যানের লালিত ক্যাডার বাহিনীর দ্বারা শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।
মামলার সূত্রে জানা যায়, জহিরুল ইসলাম জুয়েল নির্বাচিত হওয়ার পর পরিষদ থেকে কোন প্রকার ট্রেড লাইসেন্স, উত্তরাধিকার সনদ ও জন্মসনদ নিতে হলে তাকে সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া হতদরিদ্র মহিলাদের সুবিধা (ভিডব্লিউবি) কার্ড দেয়ার কথা বলে সর্বনিম্ন ৫শত থেকে ১ হাজার টাকা করে নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন। তাছাড়া কার্ড দেয়ার কথা বলে প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টিও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে ইস্যুকালীন কার্ডে ঘষামাজা ও টেম্পারিং করে বিগত ৯ মাসের ৮ হাজার ১শত কেজি চাউল বিক্রি করে ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২২ সালের ২০ মার্চ রুহুল আমিন নামে একজনকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরিষদের প্যাডে ভূয়া পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ প্রদানের খবরটি এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। যে কোন প্রকল্প বা কর্মসূচির কাজে তাকে ২৬ পার্সেন্ট টাকা না দিলে চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল মাস্টার রোলে স্বাক্ষর করেন না বলেও আদালতে দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে ধাপকাই গ্রামের মৃত কাশেম আলীর ছেলে মাসুক মিয়া ট্রেড লাইসেন্স আনতে পরিষদে গেলে চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল প্রথমে তাকে ট্যাক্স পরিশোধের কথা বলেন। মাসুক মিয়া টাকা দেয়ার রশিদ দেখালে চেয়ারম্যান তা হাতে নিয়ে ছিড়ে ফেলে নতুন করে ১০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করেন। পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স নিতে হলে তাকে ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলেও জানান রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কিও হয় বলেও জানা গেছে।
দিরাই উপজেলার সদ্য বিদায়ী নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান মামুন জানান, অভিযোগের কপি আমাকে দেয়া হলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব দিরাই) এ জে এম রেজাউল আলমসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ি তদন্ত কার্যক্রমের রিপোর্ট আসলে বিস্তারিত জানা যাবে। তিনি আরও জানান, শুরু থেকেই রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নানা ধরণের দুর্নীতিতে জড়িয়ে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে, যা অত্যন্ত খারাপ একটি বিষয়।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব দিরাই) এ জে এম রেজাউল আলম জানান, আমি প্রাথমিকভাবে একটি তদন্ত করেছি, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে চলতি মাসেই, এজন্য এ বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি পরিষদের সকল সদস্যকে ডেকে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা দুই ভাগে দুই রকম কথা বলেছেন। তাতে মনে হয়েছে এ বিষয়ে আরও সময় নিয়ে এবং উপকার ভোগীদের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া দরকার। তদন্তের পর রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল তাকে উৎকোচ দেয়ার চেষ্টা করলে অফিস থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করার বিষয়টিও স্বীকার করেন ডিডি।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা। পরিষদে কিছু সংখ্যক বিএনপি-জামায়াতের সদস্য রয়েছে, তারা শেখ হাসিনার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত ও আমার মানহানি করতে বার বার মিথ্যা অভিযোগ করে আসছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমার পক্ষে প্রতিবেদন আসার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে কোন ধরণের উৎকোচ দেয়ার চেষ্টা করিনি, এগুলো আমার নামে মিথ্যা রটানো হয়েছে।